17439 [Converted]

কলবুন সালীম

গতকালকে একটা পিকচারে দেখলাম লেখা আছে, কুরআনে ইবাদতের কথা এসেছে শতকরা মাত্র ২ পার্সেন্ট। আর আখলাক বা উত্তম আচার-আচরণের কথা এসেছে শতকরা ২৫ পার্সেন্ট। বিষয়টা দেখার পর থেকেই বারবার এটা মাথায় ঘুরছিল। আজকে তিলাওয়াত করতে গিয়ে সূরা শুআরার একটা আয়াতে এসে এর রহস্যটা ভালো মতো বুঝতে পারলাম। মূলত আখলাক ভালো হলে মানুষের ক্বলব বা অন্তর স্বচ্ছ ও নিষ্কলুষ থাকে। তখন ইবাদাত করা এমনিতেই সহজ হয়ে যায়। তাই ইবাদতের জন্য যেটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, সেটাকেই বেশি ফোকাস করা হয়েছে কুরআনে। 

পরকালে মুক্তি পাবে কারা? কুরআনে বলা হয়েছে, যারা ‘ক্বলবুন সালীম’ বা নিষ্কলুষ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসতে পারবে। বলা হয়নি যারা বেশি নামাজি বা যারা বেশি দানখয়রাত করে বা যারা বেশি রোজা রাখে তারা মুক্তিপ্রাপ্ত। বলা হয়েছে- 

يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُون إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ

‘সেদিন সম্পদ ও সন্তানাদি কোন কাজে আসবে না। তবে (মুক্তি পাবে তারা) যারা আল্লার কাছে পরিশুদ্ধ-নিষ্কলুষ অন্তর নিয়ে আসবে।’ (সূরা শুআরা : ৮৮-৮৯)

ক্বলব যদি সালীম না হয় তাহলে নামাজ পড়েও একজন মানুষ সুদখোর-ঘুষখোর হতে পারে, চোর-বাটপার হতে পারে। আবার প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত ইবাদত না করেও কেউ পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী হবার কারণে পরকালে মুক্তি পেয়ে যাবে। সেজন্য অন্তরকে সালীম রাখার কোন বিকল্প নেই। 

অন্তরকে সালীম রাখার পক্ষে সহায়ক কিছু বিষয় হলো-

ক. হারাম ভক্ষণ করা থেকে দূরে থাকা।

খ. নজরের হেফাজত করা। 

গ. অনর্থক কথা পরিহার করা। 

এর বাইরে যে কোন ধরনের গুনাহ ও আল্লাহর অবাধ্যতাও অন্তরকে কলুষিত করে। এর পবিত্রতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হাদীসে এসেছে, ‘যখন বান্দা কোন গুনাহ করে, তখন তার অন্তরে এটা কালো দাগ পড়ে যায়’। এভাবে যত গুনাহ করতে থাকে, তত বেশি কালো দাগ পড়তে থাকে এবং অন্তরের উজ্জ্বলতা কমতে থাকে। 

অন্তর তার নিষ্কলুষতা হারানোর দ্বারা সবচে বড় যে ক্ষতির শিকার হয় তা হলো, তার মধ্যে অন্ধত্ব বাসা বাধে। তখন সে চোখ থাকা সত্ত্বেও দেখতে পায় না। এটা চোখের অন্ধত্বের চেয়ে মারাত্মক; বরং এটাই প্রকৃত অন্ধত্ব। কুরআনও আমাদের সেই কথাই বলছে, 

فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ

‘চোখ তো অন্ধ হয় না; বরং বুকের মধ্যে থাকা অন্তর অন্ধ হয়।’ (সূরা হাজ্জ : ৪৬) 

দৈনন্দিন জীবনে না চাইতেও অন্তরের যে সালামত বা নিষ্কলুষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা মেরামত করার সবচে কার্যকর উপায় হলো বেশি পরিমাণে কুরআনের তিলাওয়াত ও আল্লাহর যিকর করা। তাছাড়া জানাযায় শরীক হওয়া ও কবর যিয়ারতের মাধ্যমে মৃত্যুর কথা স্মরণ করার দ্বারাও ক্বলবের সালামত তাজা হয়। 

শরীরচর্চার মতো অন্তরের পরিচর্যার প্রতিও নিয়মিত লক্ষ্য রাখা কর্তব্য; বরং এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি। কারণটা নবীজির মুখেই শুনুন- ‘নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে একটি মাংসপিন্ড আছে, যদি তা সঠিক থাকে, তাহলে  পুরো শরীরই সঠিক থাকে। আর যদি তা বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে পুরো শরীরই বিনষ্ট হয়ে যাবে, শুনে রাখ তা হলো ক্বলব বা অন্তর। (সহীহ্ বুখারী) 

ইবাদতের সাথে অন্তরের অবস্থার পারস্পরিক সম্পর্কটা খেয়াল করুন। নামাজ-রোজা-হজ এগুলো শারীরীক ইবাদত। যেহেতু অন্তর ঠিক থাকলে শরীর ঠিক থাকে, তখন সেই শরীর দিয়ে শারীরীক ইবাদত পালনে কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু যদি অন্তর ঠিক না থাকে, তাহলে যেহেতু শরীরও ঠিক থাকে না, তাই সেই শরীর দিয়ে শারীরীক ইবাদাতগুলো পালন করা সম্ভব হয় না। অথবা কষ্টেক্লিষ্টে সম্ভব হলেও তা থাকে এমন দুরাবস্থাসম্পন্ন, যা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার অযোগ্য।

মোটকথা হলো, অন্তরকে পরিশুদ্ধ রাখার কোন বিকল্প নেই। এটা ছাড়া জান্নাতে যাওয়া শুধু দুষ্করই না, একরকম অসম্ভব প্রায় বলা যেতে পারে। 

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

জনপ্রিয় ব্লগ