রমজান মাস অন্য সকল মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যার ফলে এই মাসে অল্প আমলে অধিক নেকি পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে এসেছে, এ মাসের একটি নফল ইবাদতের মর্যাদা অন্য মাসের ফরয ইবাদতের সমান। আর এ মাসের একটি ফরয ইবাদত অন্য মাসের ৭০টি ফরয ইবাদতের সমান। (শুআবুল ঈমান; বায়হাকী, ৩/৩০৫)। তাই নববী যুগ থেকেই এই মাসকে সম্পূর্ণ গুরুত্ত্ব দিয়ে মুল্যায়ন করার প্রচলন চলে আসছে। সালাফে সালেহীন ও বুজুর্গানে দ্বীন এই মাস এলে অন্য সকল ব্যস্ততা কমিয়ে দিতেন এবং ইবাদাতে অধিকহারে নিমগ্ন হতেন।
রমজান মাসকে সুন্দরভাবে কাটাতে ছোটখাট পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে পারেন। এতে ইবাদাতের এই মাসটি অধিক ফলদায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজই পুরোপুরি সফল হয় না। এক্ষেত্রে যেই পরামর্শগুলো অনুসরন করারা মাধ্যমে আপনার রমজানকে ফলপ্রসু করতে পারেন তা হলো-
১. প্রথমেই সঙ্কল্প করে নিন আপনি এবারের রমজানটা অন্যান্য রমজান থেকে বেশি ইবাদাতে কাটাবেন। সুদৃঢ় সঙ্কল্প আপনাকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে দিবে।
২. সারাবছর যাদের তাহাজ্জুদ পড়ার সৌভাগ্য হয় নি তারা এই মাসে সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। কারণ সেহরি খাওয়ার জন্য আমাদেরকে তাহাজ্জুদের সময়েই ঘুম থেকে উঠতে হয়। সুতরাং খাবার খাওয়ার আগে কয়েক রাকাত তহাজ্জুদ পড়ে নিন।
৩. ইফতারির আগ মুহর্তে দুআ কবুল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ইফতারির ব্যবস্থাপনাগত কাজকর্ম আগেভাগে শেষ করে ইফতার সামনে নিয়েই দুআ করতে বসুন।
৪. রমজান হলো কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে যতো বেশি পারা যায় কুরআন তিলাওয়াত করুন। ধীরেসুস্থে তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত করুন। অনেকে রমজান মাসে খতম উঠানোর জন্য খুব তাড়াহুড়ো করে তিলাওয়াত করে। ফলে তিলাওয়াতটা বিশুদ্ধ হয় না। ‘যেভাবেই হোক এক খতম দিতে হবে’ এই ধরণের মানসিকতা পরিহার করে আস্তেধীরে পড়ুন। আস্তেধীরে পড়ে খতম করার চেষ্টা করুন। নয়তো যতোটুক হয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। মনে রাখবেন, পরিমাণের চেয়ে গুণগতমান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৫. যারা দেখে কুরআন পড়তে পারেন না তারা কুরআন শিক্ষা করার জন্য এই মাসকে বেছে নিন। সেই সাথে দেখে পড়তে পারেন না বলে তিলাওয়াত থেকে বঞ্চিত না থেকে যতোগুলো সুরা আপনার মুখস্ত আছে সেগুলোকেই বারবার পড়ুন। হোক সেটা ছোটছোট সুরা। এতেও আপনার কুরআন তিলাওয়াত হয়ে যাবে। অনেকেই দেখে পড়তে না পারার কারণে কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে দূরে সরে থাকে। অথচ এটা নিরেট বোকামি।
৬. এই মাসে কুরআনের কিছু নির্বাচিত অংশ মুখস্ত করার প্রতি মনোযোগ দিন। যেমন আয়াতুল কুরসি, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, শেষের দিকের ছোটছোট সুরাগুলো, সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা আর-রহমান ইত্যাদি। (কুরআন হিফজ কীভাবে করবেন? এই বিষয়ে আমাদের পরামর্শ ও কিছু টিপস জানতে ক্লিক করুন এখানে)
৭. প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি তিলাওয়াতকৃত অংশ থেকে কিছু অনুবাদ- সাথে সামান্য তাফসীর থাকলে আরও ভালো হয়- পড়ে নেবার চেষ্টা করুন। যাতে মন্ত্রের মতো কেবল তিলাওয়াতে আপনার কুরআন চর্চা সীমাবদ্ধ না থাকে। তিলাওয়াতে কুরআনের সাথেসাথে তাদাব্বুরে কুরআন বা কুরআনের শিক্ষা জানা ও তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার আমলটুকুও হয়ে যায়।
৮. যেসময়টুকু ক্লান্তির কারণে শুয়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন সেসময়টুকু মনে মনে ইস্তিগফার ও যিকির-আযকারে ব্যায় করুন। যাতে বিশ্রামের সময়টুকুতেও আপনি ইবাদাতে মগ্ন থাকতে পারেন।
৯. যতো পারা যায় কথা বলা কমিয়ে দিন। কথা বললেই গীবত-শেকায়াত, মিথ্যা ও হাসি-তামাশার রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাই কথা কম বলুন। নিরাপদ থাকুন। আপনার রোজাকে সতেজ-সজীব রাখুন।
১০. রমজান মাসে বেশি বেশি দুআ করুন। ইস্তেগফার করুন। দান-সাদাকাহসহ অন্যান্য নেকির কাজগুলোও সাধ্যানুসারে বেশি বেশি করুন। যতোবেশি পারা যায় ইবাদাতের মাধ্যমে এই মাসকে সাজিয়ে তুলুন। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। আমীন।
১১. নেটে না আসতে পারলে সবচে ভাল হয়। বিশেষকরে শ্যোসাল মিডিয়াতে (ফেসবুক/ইউটিউব) স্ক্রোল করা পরিহার করুন। এটি আপনার অনেক সময় বাঁচিয়ে দিবে। সবচে ভাল হয় ফোন থেকে ফেসবুক এপ আন্সটল করে দিন। প্রয়োজন হলে পিসি/ল্যাপটপ থেকে এটি ব্যবহার করুন। আর পিসি না থাকলে ও ব্যবহারের দরকার পড়লে অন্য যে কোন ব্রাউজার থেকে ব্যবহার করুন।
১২. রমজান বিষয়ক কিছু ফাজায়েল ও মাসায়েল জেনে নিন। বিশেষকরে রোজার সাথে সম্পর্কিত মাসআলাগুলো একবার পড়ে নিন। এর জন্য আমাদের ফিকহুস সিয়াম ফ্রি কোর্সটি করে নিতে পারেন। কোর্সে যাবার জন্য ক্লিক করুন এখানে–
কিংবা অন্ততপক্ষে কোর্সে দেওয়া মাসায়েলের শিটটি একবার পড়ে নিন। শিটটি কোর্সের সাথেই পেয়ে যাবেন। চাইলে এখান থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এর ক্লিক করুন এখানে
(পোস্টটি ফায়দাজনক মনে হলে শেয়ার করুন। যাতে অন্যরাও উপকৃত হতে পারে।)
